বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসংক্রান্ত নীতিমালা নির্ধারণের এখতিয়ার **বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)**-র নেই। পিএসসি একটি স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, যার মূল কাজ হলো সরকারি চাকরিতে নিয়োগের জন্য পরীক্ষা ও বাছাই প্রক্রিয়া পরিচালনা করা। তবে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বা বয়সসীমা নির্ধারণের ক্ষমতা পিএসসি-র আওতাধীন নয়। এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার থাকে **সরকারের** কাছে, বিশেষ করে **জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়** বা সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারক সংস্থাগুলোর অধীনে।
বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা সাধারণত ৩০ বছর, তবে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ক্ষেত্রে এবং কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে বয়সসীমা শিথিল করা হয়ে থাকে। অনেকেই এই বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসছে, বিশেষত যারা পড়াশোনা বা অন্যান্য কারণে নির্ধারিত সময়ে চাকরিতে আবেদন করতে পারেন না।
যদি সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পরিবর্তন বা সংশোধনের প্রয়োজন হয়, তা জনমত, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, এবং অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে করা হয়। পিএসসি কেবল সেই নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষা ও নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পাদন করে।
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর এবং অবসরের বয়সসীমা ৬৫ বছরে উন্নীতকরণের একটি প্রস্তাবের চিঠি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক সারজিস আলম সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানো নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। স্ট্যাটাসে সারজিস আলম বলেছেন, ‘বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে ৩৫ কিংবা ৬৫ কোনোটাই যৌক্তিক না। ৩২ এবং ৬০ নিয়ে ভাবা যেতে পারে।’
এর আগে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ বছর ও অবসরের বয়স ৬৫ বছর করার জন্য প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন যে দাবি করেছিল, সেটি সরকারি পর্যায়েও গুরুত্ব পেয়েছে।
প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠনটি এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আবেদন করেছিল। বিষয়টি যেহেতু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মপরিধির আওতার মধ্যে পড়ে, তাই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দাবি–সংক্রান্ত সেই চিঠি বা প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। শুধু এ-সংক্রান্ত যে প্রস্তাব জমা পড়েছিল, সেটিই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. সাজ্জাদুল হাসান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে পাঠানো হয়েছে। মো. সাজ্জাদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কাছে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর এবং অবসরের বয়সসীমা ৬৫ বছরে উন্নীতকরণের প্রস্তাব এসেছিল। আমরা তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ফরোয়ার্ড করেছি। এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমাদের কাছে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব জমা পড়েছিল। সেটি জনপ্রশাসনে পাঠিয়েছি।’
বর্তমানে চাকরিতে প্রবেশের সাধারণত সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩০ বছর। আর অবসরে যাওয়ার বয়সসীমা ৫৯ বছর। সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা অবিলম্বে ৩৫ বছর করার দাবিতে কয়েক দিন আগে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছিলেন একদল চাকরিপ্রত্যাশী।
0 coment rios: